কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা: কেন এটি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত?

কিসমিস শুধু একটি মিষ্টি শুকনো ফল নয়, এটি শরীরের জন্য একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা বয়ে আনে। এটি আয়রনের ঘাটতি দূর করে, রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায় এবং রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুকনো কিসমিসের তুলনায় ভিজিয়ে খাওয়া কিসমিস আরও উপকারী। কারণ ভিজানো কিসমিস শরীরের পক্ষে সহজে হজম হয় এবং এর পুষ্টিগুণ আরও ভালোভাবে শোষিত হয়।
কিসমিস খেলে কী কী উপকার পাবেন?
১) স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ায়
যারা স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে চান, তাদের জন্য কিসমিস আদর্শ। এতে প্রাকৃতিকভাবে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে যা শরীরে শক্তি জোগায়। বডি বিল্ডার কিংবা অ্যাথলেটদের জন্য এটি বেশ উপকারী, কারণ এতে উচ্চমানের ক্যালোরি থাকলেও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে না।
২) ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
কিসমিসে ক্যাটেচিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে থাকা ফ্রি র্যাডিকেলগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফ্রি র্যাডিকেলগুলোই ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিয়মিত কিসমিস খেলে দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৩) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিসমিস খেলে খাবার পরবর্তী সময়ে ইনসুলিনের ওঠানামা কম হয়। এটি লেপটিন ও ঘ্রেলিন হরমোনের নিঃসরণে সহায়তা করে, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪) অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে
কিসমিস আয়রনের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস। এটি রক্তস্বল্পতা কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, এতে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও কপার, যা শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
৫) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কিসমিসে থাকা বোরন স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক। এটি শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে পারে।
৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল যৌগ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং সাদা রক্তকণিকাকে সক্রিয় রাখে।
৭) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপজনিত ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ কিসমিস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৮) হাড় শক্তিশালী করে
কিসমিস ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। বোরন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও এতে থাকে, যা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
৯) হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখে। এটি প্রাকৃতিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
১০) চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
কিসমিস ভিটামিন-এ, বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
১১) দাঁতের যত্নে কার্যকর
অলিওনেলিক অ্যাসিড নামক একটি ফাইটো-কেমিক্যাল কিসমিসে থাকে, যা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায় এবং এনামেল শক্তিশালী করে, যা দাঁতের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১২) জ্বর সারাতে সহায়ক
কিসমিসে রয়েছে ফেনল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
কিসমিস খাওয়ার সেরা উপায়
কিসমিসের সম্পূর্ণ উপকার পেতে এটিকে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সকালে খাওয়া সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। ভেজানো কিসমিসের শর্করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং এটি সহজে হজম হয়। বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য ভেজানো কিসমিস অত্যন্ত উপকারী।
সতর্কতা
অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে কিসমিস হতে পারে আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সংযোজন।