নগরী থেকে নরডিক কাঠ পর্যন্ত: পপসংগীতে নারীবিদ্বেষ ও সাহিত্যিক নান্দনিকতা

পপসংগীত ও লিঙ্গ বৈষম্য: ‘ক্যান্ডি গার্লস’ এর বিশ্লেষণ

সঙ্গীতশিল্পে নারীদের কাঠামোগত বৈষম্য ও যৌন নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছেন বার্লিনের লেখক সোনিয়া আইসমান। তাঁর বই ‘ক্যান্ডি গার্লস: সংগীতশিল্পে নারীবিদ্বেষ’ নারী শিল্পীদের প্রতি সহিংসতা, যৌনায়ন ও বৈষম্যের প্রথাগত চিত্র বিশ্লেষণ করে।

তিনি বলছেন, “একজন নারী গিটারিস্ট আসলে প্রথমে একজন নারী, তারপর গিটারিস্ট।” এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে সংগীত জগতে নারীর দক্ষতা নয়, বরং তাদের শরীর এবং যৌন আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ‘ক্যান্ডি গার্লস’ নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নারী শিল্পীদের প্রতি পপ সংস্কৃতির দৃষ্টিভঙ্গি: তারা যেন সহজলভ্য, নিষ্পাপ এবং ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।

‘Norwegian Wood’-এ আগুন আর প্রতিহিংসা

বিটলসের ‘Norwegian Wood’ গানে এক নারী চরিত্রকে প্রতারণা করে প্রতিশোধ নেওয়ার বিষয়টি যেন শুরু করে এই বিশ্লেষণ। সেখানে পুরুষ চরিত্রটি রাগ করে নারীর ঘর জ্বালিয়ে দেয়। আর সেই ঘটনার পটভূমিকায় শুনতে পাওয়া যায় মধুর সুরে গাওয়া—”Isn’t it good, Norwegian Wood?”

এই একটির মতো গল্প অনেক আছে। এমিনেম তার ‘Kim’ গানে সাবেক স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার কল্পনা করেন। জনি ক্যাশসহ অনেক শিল্পী পশ্চিমা ‘মরদার অব প্যাশন’ ধাঁচের গান করেছেন, যেখানে নারীর মৃত্যু হয় পুরুষের রাগ বা অভিমানে।

নারীর মৃত্যু যেন কনটেন্ট

আইসমান তীব্রভাবে বলেন, “মৃত নারীর গল্প যে কোনো মাধ্যমে ক্লিকবেইট।” গান থেকে শুরু করে সংবাদ—সর্বত্র নারীর মৃত্যুকে ব্যবহার করা হয় ভিউ বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে। যদিও টেইলর সুইফট বা বিয়ন্সের মতো নারী শিল্পীরা আজ পপশিল্পের শীর্ষে, কিন্তু এই সাফল্য বৈষম্য দূর করতে যথেষ্ট নয়।

স্টেজের নিয়ন্ত্রণ এখনো পুরুষের হাতে

বড় মঞ্চে, প্রধান ফেস্টিভ্যালগুলোতে, প্রধানত পুরুষ শিল্পীদের আধিপত্য দেখা যায়। সেখানে নারীরা শুধু পারফর্ম করেন না, তারা নানা রকম অপবাদ, যৌন হয়রানি ও অদৃশ্য বাধার মুখোমুখি হন। তাদের ভক্তদেরও নারী বলেই কম মূল্য দেওয়া হয়।

পাশাপাশি, তরুণী ভক্তদের চিৎকার বা উল্লাসকে ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘অমানবিক’ বলা হয়। ফ্যান হওয়াটা যেন লজ্জার বিষয়, কারণ সেটা ‘নারীসুলভ’ আচরণ।

ফ্যান হওয়া—নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়

আইসমানের মতে, মেয়েদের সমাজিকীকরণ এমনভাবে হয় যে তারা মঞ্চের পাশে কল্পনা করতে শেখে, মঞ্চের ওপর নয়। অথচ ফ্যান হওয়া অনেক নারীর জন্য একটি মুক্ত এলাকা, যেখানে তারা নিজেদের মত করে অনুভব করতে পারে। তবে সবসময় তা নিরাপদ নয়। বার্লিনের রক ব্যান্ড Rammstein-এর কনসার্ট পরবর্তী পার্টিগুলোতে যেভাবে নারী ভক্তদের হেনস্তা করা হয়েছে, তা এর প্রমাণ।

প্রতিরোধের পথ: কর্মসূচি, বয়কট, বিকল্প সংগীত

বইয়ের শেষদিকে লেখিকা দেখান, কীভাবে সক্রিয়তা পরিবর্তন আনতে পারে। #MeToo আন্দোলন, নারী ও লিঙ্গ সংখ্যালঘু শিল্পীদের গানকে কেন্দ্র করে গঠিত বিকল্প পপ-ক্যানন, কর্মশালা ও বয়কট—এসবই সঠিক পথে এগোনোর ইঙ্গিত।

তার ভাষায়, “লিঙ্গবৈষম্যমূলক সংগীতশিল্পের জন্য বাতাস ক্রমেই হালকা হয়ে আসছে।”


সাহিত্যে নান্দনিকতার ঠিকানা: নিডারজাকসেন থেকে বিশ্বমঞ্চ

অপরাধ ও উপকূল: ওস্টফ্রিজল্যান্ডের রহস্য

উত্তর-পশ্চিম জার্মানির ওস্টফ্রিজল্যান্ড—শুধু প্রকৃতি নয়, এখানে রচিত হচ্ছে জনপ্রিয় অপরাধ সাহিত্য। ক্লাউস-পিটার উলফের ‘ওস্টফ্রিজেন’ সিরিজের বইগুলো—যেমন ‘Ostfriesenkiller’, ‘Ostfriesenblut’, ‘Ostfriesennebel’—বিক্রি হয়েছে প্রায় দেড় কোটির বেশি কপি।

উলফ বলেন, “আমি ডাইক বরাবর হাঁটতে গিয়ে ভাবলাম, এই সুন্দর প্রকৃতিকে আমার কাহিনির চরিত্র বানাবো।” আর সেই প্রকৃতি সত্যিই তাঁর গল্পে যেন নায়ক।

পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যে ল্যান্ডস্কেপ ও লিঙ্গ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মান বুক প্রাইজের শর্টলিস্টে স্থান পেয়েছেন নিডারজাকসেনের দুই লেখক—গোটিংগেনের জেহোনা কিকাই ও হ্যানোভারের মার্কুস থিলেমান। থিলেমানের কথায়, “আমি মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক নিয়ে লিখতে পছন্দ করি।”

তাঁর উপন্যাস ‘Von Norden rollt ein Donner’ এক তরুণ রাখালের কাহিনি, যার পটভূমি লুনেবুর্গ হাইড।

শিল্প থেকে শিল্পবিপ্লব: পালটাচ্ছে সাহিত্য

নাভা ইব্রাহিমির সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘Und Federn überall’ তুলে ধরে কীভাবে একটি পোল্ট্রি কারখানায় কাজ করার অভিজ্ঞতা সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। এটা আংশিক কল্পনার মিশ্রণে Haaren an der Ems অঞ্চলের বাস্তবতাকে তুলে ধরে।

বৈচিত্র্যের ভিতর ঐতিহ্য

প্রথম জার্মান কবি হিসেবে পরিচিত রোসউইথা ভন গান্ডারসহ নারীরা এই অঞ্চলে প্রায় এক হাজার বছর ধরে লিখে আসছেন। অন্যদিকে, বাইরের দৃষ্টিকোণ থেকেও নিডারজাকসেন সমৃদ্ধ। স্পেনীয় লেখক ফার্নান্দো আরামবুরু বলেন, “আমি জার্মানি থেকে স্পেনকে দেখি, যা আমাকে সহনশীল করে তোলে।”

স্মৃতি, যুদ্ধ ও নিষিদ্ধ সাহিত্য

নিডারজাকসেনের অনেক শহরের সঙ্গে যুক্ত আছে বিখ্যাত সাহিত্যিকরা—আর্নো স্মিড (Bargfeld), ওয়াল্টার কেম্পওস্কি (Nartum), রাইনার মারিয়া রিলকে (Worpswede), এরিখ মারিয়া রেমার্ক (Osnabrück)। তাঁর যুদ্ধবিরোধী উপন্যাস ‘Im Westen nichts Neues’ এক বছরের মধ্যেই চলচ্চিত্রে রূপ পায়। তবে নাৎসিদের কারণে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন—যেমন কুর্ট শভিটার্স, যিনি লিখেছিলেন বিখ্যাত কবিতা ‘An Anna Blume’।

এইভাবেই সংগীত ও সাহিত্য মিলিয়ে নিডারজাকসেনের আলোয় ভেসে ওঠে নারী, প্রকৃতি, রাজনীতি ও প্রতিরোধের বহুমাত্রিক গল্প।