ঘরের আতঙ্ক ছারপোকা: মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায়

ছারপোকা, ঘরের একটি পরিচিত এবং বিরক্তিকর সমস্যা, যা একবার ঘরে প্রবেশ করলে পুরো পরিবেশ অস্বস্তিকর করে তোলে। ছোট এই পোকাটি মানুষ ঘুমিয়ে থাকাকালীন রক্ত চুষে নেয় বলে একে রক্তচোষা পোকাও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত বিছানা, বালিশ, কাঁথা, তোশক, সোফা এবং মশারির মধ্যে এদের বাসস্থান তৈরি হয়। যদিও এটি পুরোপুরি নিশাচর নয়, তবে রাতেই বেশি সক্রিয় থাকে এবং সেই সময়েই মূলত আক্রমণ চালায়।
এই ছারপোকা থেকে রক্ষা পেতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করলে সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। নিচে এমনই কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।
ল্যাভেন্ডার অয়েলের ব্যবহার
ল্যাভেন্ডার অয়েল ছারপোকার জন্য খুবই বিরক্তিকর। ঘরের যেসব জায়গায় ছারপোকার অবস্থান রয়েছে, সেখানে দিনে দু’বার করে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করলে পোকাগুলো সেসব জায়গা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। নিয়মিত দুই থেকে তিন দিন এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার
ছারপোকা সাধারণত ১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি তাপমাত্রায় মারা যায়। তাই ঘরে যদি ছারপোকার সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, তোশক, কাঁথা বা অন্য যেসব কাপড়ে ছারপোকা থাকতে পারে, সেগুলো গরম পানিতে ফুটিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। এতে পোকা ও তার ডিম সহজেই ধ্বংস হবে।
কেরোসিনের প্রলেপ
আসবাবপত্রের কোণায় কিংবা ছিদ্রে মাঝে মাঝে সামান্য কেরোসিন তেল লাগিয়ে দিলে ছারপোকা আর সেখানে বাসা বাঁধতে পারবে না। কেরোসিনের গন্ধ এই পোকাকে দূরে রাখে এবং উপস্থিত পোকাগুলোকে পালাতে বাধ্য করে।
ন্যাপথলিনের কার্যকারিতা
ন্যাপথলিন ছারপোকা তাড়ানোর আরেকটি কার্যকর উপাদান। মাসে অন্তত দু’বার করে ন্যাপথলিন গুঁড়ো করে বিছানা, তোশক, সোফা কিংবা যেসব স্থানে ছারপোকার আনাগোনা বেশি, সেখানে ছিটিয়ে রাখলে তা ছারপোকা নিধনে সাহায্য করবে। এটি একটি সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উপায়।
অ্যালকোহল স্প্রে করুন
ছারপোকা প্রবণ জায়গায় সামান্য অ্যালকোহল স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। অ্যালকোহল সরাসরি ছারপোকার শরীরে স্পর্শ করলেই তা মারা যায়। তবে স্প্রে করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি, কারণ অ্যালকোহল দাহ্য পদার্থ।
রোদে শুকানো
আসবাবপত্র ও বিছানার জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করার পাশাপাশি রোদে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোদের তাপে ছারপোকা ও তার ডিম নষ্ট হয়ে যায়। অন্তত সপ্তাহে একবার লেপ, কাঁথা, তোশক ইত্যাদি রোদে শুকিয়ে রাখলে ছারপোকার উপদ্রব অনেকাংশে কমে যাবে।
সতর্ক থাকুন, ব্যবস্থা নিন
ছারপোকা একবার ঘরে প্রবেশ করলে তা পুরোপুরি নির্মূল করতে সময় ও ধৈর্য প্রয়োজন। তাই আগেভাগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ঘরের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি উপরের প্রাকৃতিক উপায়গুলো ব্যবহার করলে ছারপোকা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এইসব পদ্ধতি ঘরে প্রয়োগ করে যদি সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে পেশাদার কীটনাশক নিয়ন্ত্রণকারীদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তবেই ঘর থাকবে ছারপোকামুক্ত, সুস্থ ও নিরাপদ।