ভারত ও বাংলাদেশে একযোগে বাড়ছে সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম

প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশে একযোগে বাড়ছে সিগারেটসহ বিভিন্ন তামাকজাত ও বিলাসপণ্যের দাম। উভয় দেশের সরকারই জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে সাধারণ ভোক্তা, বিশেষ করে ধূমপায়ীদের এখন থেকে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ।

ভারতে জিএসটি বৃদ্ধির ঘোষণা

ভারতের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কাউন্সিলের ৫৬তম বৈঠকে তামাকজাত পণ্যের উপর কর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তামাকপণ্যের উপর জিএসটি ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়। এই নতুন করের হার আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতে সিগারেটের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এতদিন যে সাধারণ আকারের সিগারেটের দাম ছিল ১৯ রুপি, তা নতুন কর কাঠামোতে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২১.৭০ রুপি। অর্থাৎ, প্রতিটি সিগারেটের জন্য ভোক্তাকে প্রায় ২ রুপি বেশি খরচ করতে হবে। একইভাবে, ১০ রুপির একটি ছোট সিগারেটের দাম বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১০.৯৪ রুপি।

শুধু সিগারেটই নয়, পান মসলা, সিগার, চুরুট এবং অন্যান্য তামাকজাত পণ্য এবং ধূমপানের আনুষঙ্গিক যেমন পাইপ ও সিগারেট হোল্ডারের উপরও এই ৪০ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে। সরকারের মতে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা এবং “পাপ কর” বা “Sin Tax” থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানো। তামাকপণ্য ছাড়াও মিষ্টি ও বায়ুযুক্ত পানীয়, ক্যাফেইনযুক্ত ড্রিংকস, ৩৫০সিসির উপরের মোটরসাইকেল, বিলাসবহুল গাড়ি এবং ব্যক্তিগত বিমানের মতো পণ্যের উপরও একই হারে কর আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বাজেটেও একই সুর

এদিকে, বাংলাদেশের নতুন অর্থবছরের বাজেটেও সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সিগারেটের বিভিন্ন স্তরে দাম ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবে নিম্নস্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের দাম ৪০ টাকা, মধ্যম স্তরের ৬৫ টাকা, উচ্চস্তরের ১১১ টাকা এবং অতি-উচ্চ স্তরের ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্নস্তরের সিগারেটের উপর ৫৭ শতাংশ এবং বাকি তিনটি স্তরের উপর ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে হাতে তৈরি ফিল্টারবিহীন বিড়ি এবং ফিল্টারযুক্ত বিড়ির দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে, যদিও সম্পূরক শুল্কের হার অপরিবর্তিত থাকছে।

বাংলাদেশে শুধু সিগারেটই নয়, আরও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। বিদেশি ফল, ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকসের মতো প্রায় ১৩৫টি পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, আমদানি করা স্মার্টফোন, বিলাসবহুল গাড়ি, ফ্রিজ এবং এসির দামও বাড়বে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবরও রয়েছে। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিন্টার এবং অন্যান্য কম্পিউটার যন্ত্রাংশের উপর থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে দেশে তৈরি কম্পিউটার ও আইসিটি পণ্যের দাম কমতে পারে। একই কারণে দেশীয় কৃষি যন্ত্রপাতি এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি গাড়ির দামও তুলনামূলকভাবে কমবে।

ভোক্তাদের উপর প্রভাব

উভয় দেশের সরকারের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াবে, তেমনই ধূমপায়ী এবং বিলাসপণ্য ব্যবহারকারীদের উপর সরাসরি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে। কর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উভয় দেশেই তামাকের ব্যবহার কমানোর একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, যার প্রভাব আগামী দিনগুলোতে বাজারে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হবে।