সময়ে জমে থাকা রহস্য: জার্মানির জুরাসিক যুগের জীবাশ্ম খনিতে প্রাচীন সামুদ্রিক দানবের সন্ধান

প্রাচীন সামুদ্রিক জীবের নতুন পরিচয়

জার্মানির বিখ্যাত পসিডোনিয়া শেলের জীবাশ্ম খনি থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এক নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক সরীসৃপের সন্ধান পেয়েছেন, যা প্রায় ১৮ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে জুরাসিক মহাসাগরে বিচরণ করত। এই আবিষ্কার পৃথিবীর আদিম সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।

নতুনভাবে শনাক্তকৃত এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে Plesionectes longicollum, যার অর্থ “দীর্ঘ গলাযুক্ত সাঁতারু-সদৃশ।” এটি প্লেসিওসোরয়েডস নামক সামুদ্রিক সরীসৃপের এক শাখার অন্তর্ভুক্ত, যারা ডাইনোসরের যুগে সাগরে রাজত্ব করত। এদের ছোট মাথা এবং লম্বা নমনীয় গলার জন্যই মূলত তারা বিখ্যাত।

জীবাশ্মের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য

এই প্রাণীর প্রায় পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল, যাতে বিরলভাবে সংরক্ষিত ছিল নরম টিস্যুর ছাপ, প্রথমে ১৯৭৮ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির হোলৎসমাডেন এলাকার একটি খনি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে কয়েক দশক পরই বিজ্ঞানীরা এর স্বতন্ত্র শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হন যে এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি।

“এই নমুনাটি বহু বছর ধরে জাদুঘরের সংগ্রহে ছিল, কিন্তু পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে এর বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি,” বলেন ড. স্বেন সাখস, যিনি বিলেফেল্ডের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ও গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক। “আমাদের বিশ্লেষণে এর কঙ্কালের এমন সব গঠন দেখা গেছে, যা একে অন্য সব পরিচিত প্লেসিওসোর থেকে আলাদা করে।”

পুরাতন জীবাশ্মে নতুন বিস্ময়

পঞ্চাশ বছর আগে উত্তোলন করা এই জীবাশ্মটিই এখন পর্যন্ত হোলৎসমাডেন অঞ্চল থেকে পাওয়া প্রাচীনতম প্লেসিওসোর। যদিও প্রাণীটি মৃত্যুকালে পূর্ণবয়স্ক ছিল না, তবুও এর স্বতন্ত্র শারীরিক বৈশিষ্ট্য যথেষ্ট পরিপক্ব ছিল, যার ফলে এটি নতুন গণ ও প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

গবেষণার সহলেখক ড. ড্যানিয়েল ম্যাডজিয়া, যিনি পোলিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর প্যালিওন্টোলজিস্ট, জানান: “এই প্লেসিওসোর এমন একটি সময়ে বাস করত, যখন সমুদ্রজুড়ে অক্সিজেনের ঘাটতির মতো পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি ঘটছিল। এই আবিষ্কার সেই সংকটকালীন সময়ের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিবর্তনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র যোগ করল।”

হোলৎসমাডেনের জীবাশ্ম খনির তাৎপর্য

হোলৎসমাডেনের পসিডোনিয়া শেল অঞ্চল প্যালিওন্টোলজিস্টদের কাছে ইতোমধ্যেই বিখ্যাত—এই অঞ্চল থেকে পূর্বে আইকথিওসোর, অ্যামোনাইট এবং তিনটি প্রধান প্লেসিওসোর লাইনেজের অন্তর্গত পাঁচটি ভিন্ন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। Plesionectes longicollum যুক্ত হয়ে সেই তালিকাকে আরও সমৃদ্ধ করল, যা ইঙ্গিত করে যে এই জীবাশ্ম শেলে প্লেসিওসোরদের বৈচিত্র্য পূর্বে ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

জাদুঘরের সংগৃহীত জীবাশ্মে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

এই জীবাশ্ম এখন সংরক্ষিত আছে স্টুটগার্ট স্টেট মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরিতে, নমুনা নম্বর SMNS 51945 হিসেবে। গবেষকরা মনে করেন, এমন পুরাতন জীবাশ্মগুলোর প্রতি পুনরায় দৃষ্টিপাত করাটা নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

“এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা পুরোনো জীবাশ্মগুলোতে এখনও অজানা অনেক তথ্য লুকিয়ে আছে, যেগুলো আধুনিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা সম্ভব,” বলেন সাখস।

You may have missed