স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পদ্মা সেতু: উদ্বোধনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন

দেশের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত এবং প্রতীক্ষিত অবকাঠামোগত প্রকল্প পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। সরকার ঘোষণা করেছে, পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এই মেগা প্রকল্পটি যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে এক বিশেষ দিনে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে সেতুটির উদ্বোধন করবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী এই ঐতিহাসিক সেতুর ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচলের উদ্বোধন করবেন। দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এই প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন।

সেতুমন্ত্রী এর আগে স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা নেই। প্রকল্পের প্রায় সব কাজই শেষের পথে, মাত্র কিছু খুঁটিনাটি কাজ বাকি রয়েছে। মে মাসের মধ্যেই এসব কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

সেতুর নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধনের জন্য নির্ধারিত সময় চাওয়া হয়, যা তিনি অনুমোদন করেছেন। এরপর থেকেই সেতুর উদ্বোধন নিয়ে নিশ্চিততা তৈরি হয় এবং সরকার এই নিয়ে এখন আর কোনো দ্বিধা রাখেনি।

এদিকে, সেতুর সড়কপথের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। মূল সেতু ও সংযোগ সড়কের ভায়াডাক্টের কার্পেটিং সম্পন্ন হয়েছে। রেলিং, রেলিংপোস্ট এবং উভয় প্রান্তে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ এখন চলমান। রাতে আলোকিত রাখার জন্য সেতুর প্যারাপেটে ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্বে।

রেলিংয়ের একটি বড় চালান সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। একইসঙ্গে সেতুতে রোড মার্কিংয়ের কাজ এবং নামফলক ও ম্যুরাল স্থাপনও শেষ ধাপে রয়েছে।

সেতুর মূল কাঠামোর কাজের অগ্রগতি ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ অতিক্রম করেছে, এবং সামগ্রিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৩.৫ শতাংশের বেশি বলে জানানো হয়েছে।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সেতু, যার মাধ্যমে লৌহজং (মুন্সিগঞ্জ) ও মাদারীপুর-শরীয়তপুর অঞ্চলের মধ্যে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দুই স্তরের এই ট্রাস ব্রিজটি স্টিল ও কংক্রিটে নির্মিত হয়েছে। উপরতলে রয়েছে চার লেনবিশিষ্ট সড়কপথ এবং নিচে একক রেললাইন। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। এতে বসানো হয়েছে ৪১টি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যান।

এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে, প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে, অবশেষে এই সেতু স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।