সিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতের ছয় রানের মহাকাব্যিক জয়, সিরিজে সমতা

ঐতিহাসিক টেস্টে নাটকীয় সমাপ্তি
দক্ষিণ লন্ডনের কিয়া ওভালে এক রুক্ষ সকাল, গ্যালারিতে উপচে পড়া দর্শক এবং টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ৫৩টি বল — সবশেষে যে নামটি জয় উদযাপন করল, সেটি মোহাম্মদ সিরাজ। তার প্রাণপণ প্রচেষ্টায় নেওয়া পাঁচ উইকেট ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কাছাকাছি ব্যবধানের জয় এনে দিয়েছে — মাত্র ছয় রানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে তারা সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে।
এই ম্যাচের নাটকীয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ২০০৫ সালের এজবাস্টনের ঐতিহাসিক অ্যাশেজ টেস্টকেও তা ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে ফলাফল এসেছিল মাত্র দুই রানের ব্যবধানে। কিয়া ওভালের এই পঞ্চম দিনের এক ঘণ্টার নাটকই টেস্ট ক্রিকেটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইংল্যান্ডের লড়াই ও সিরাজের প্রত্যাবর্তন
শেষ দিনের খেলা শুরুর আগে ভারী রোলারের নিচে উইকেটকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের সামনে তখন ৩৫ রান বাকি, হাতে তিনটি (আধা সহ) উইকেট। জেমি ওভারটন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার প্রথম দুই বলেই দুটি চার হাঁকিয়ে দিলে মনে হচ্ছিল, খেলা কয়েক মিনিটেই শেষ হয়ে যাবে। তবে তখনই বাজিমাত করেন সিরাজ ও প্রসিদ্ধ। সিরাজের ধারালো স্পেল ইংল্যান্ডের শেষ প্রতিরোধও গুঁড়িয়ে দেয়।
চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার আগেই বজ্রঝড়ের কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায় — যা কিছুটা ইংল্যান্ডের পক্ষেই গিয়েছিল। কারণ তখন ব্রুক ও রুট দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন এবং ৩৭৩ রানের লক্ষ্য সহজ দেখাচ্ছিল। কিন্তু চতুর্থ দিনের সেই বিরতি সিরাজকে যেন নতুন উদ্যমে ফিরিয়ে আনে। তিনি আগুনে স্পেলে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে ছিন্নভিন্ন করেন।
ম্যাচ পরিসংখ্যান ও অবদান
ভারত প্রথম ইনিংসে ২২৪ রান করে (নাইর ৫৭, অ্যাটকিনসন ৫-৩৩)। দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী জয়সওয়ালের ১১৮ রানের উপর ভর করে স্কোর দাঁড়ায় ৩৯৬ (টাং ৫-১২৫)। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ২৪৭ রান, যেখানে ক্রাউলি (৬৪) ও ব্রুক (৫৩) রান করেন, এবং সিরাজ ও প্রসিদ্ধ ৪টি করে উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড করে ৩৬৭, যেখানে ব্রুক ১১১, রুট ১০৫ এবং ডাকেট ৫৪ রান করেন। সিরাজ পান ৫-১০৪, প্রসিদ্ধ ৪-১২৬। শেষ পর্যন্ত ভারত জয় পায় ছয় রানের ব্যবধানে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন সমীকরণ
এই ফলাফলের পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৭-এর পয়েন্ট টেবিলে বড় পরিবর্তন এসেছে। ভারত ও ইংল্যান্ড সমান সংখ্যক ম্যাচ জিতলেও ইংল্যান্ড এখন চতুর্থ স্থানে রয়েছে — তাদের পয়েন্ট ২৬ এবং শতকরা হারে ৪৩.৩৩%। লর্ডস টেস্টে ধীর ওভার রেটের জন্য ইংল্যান্ডের ২ পয়েন্ট কাটা হয়েছিল, যার ফলেই অবস্থান খারাপ হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া এখন পর্যন্ত খেলা তিনটি ম্যাচই জিতে শীর্ষে রয়েছে। তাদের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনও পয়েন্টের মুখ দেখেনি এবং ষষ্ঠ স্থানে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান এখনও বর্তমান চক্রে কোনো ম্যাচ খেলেনি।
শ্রীলঙ্কা বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে আছে, তাদের দুটি ম্যাচে এক জয় ও এক ড্র রয়েছে, ফলে পয়েন্টের শতকরা হার ৬৬.৬৭%। বাংলাদেশ আছে পঞ্চম স্থানে, তাদের অর্জিত পয়েন্ট মাত্র ৪ এবং শতকরা হার ১৬.৬৭%।
ভারতের উদযাপন
খেলা শেষ হতেই ভারতীয় খেলোয়াড়েরা বিজয়ের আনন্দে গ্যালারির চারদিকে সম্মান প্রদক্ষিণ করে। ক্লান্ত শরীরেও তাদের মুখে বিজয়ের হাসি, কারণ তারা জানে—এই জয় কেবলই ভাগ্যের নয়, সংগ্রামের ফসল। মোহাম্মদ সিরাজ, যিনি প্রথম ইনিংসেও চার উইকেট নিয়েছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়কে পরিণত হন এবং নিজের নামটি টেস্ট ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ীভাবে লিখে ফেলেন।