ইতালির সাহিত্য জগৎ: লাইব্রেরির শীর্ষে নারী লেখক এবং কমিকসের জগতে নতুন ধারা

ইতালির সাহিত্য অঙ্গনে বর্তমানে নারী লেখকদের জয়জয়কার, যা দেশটির পাঠকদের রুচি এবং পছন্দের একটি সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। অন্যদিকে, গ্রাফিক নভেলের মাধ্যমে ক্লাসিক সাহিত্যকে নতুন করে পরিবেশন করার একটি শক্তিশালী ধারাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

লাইব্রেরিতে নারী লেখকদের জয়জয়কার

ইতালির ভারেসোত্তো অঞ্চলের প্রাদেশিক লাইব্রেরি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন ইতালীয় এবং অন্যান্য দেশের নারী লেখিকারা। বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি বই পাঠকদের কাছে ধার দেওয়া আছে, যা এই অঞ্চলের মানুষের বই পড়ার প্রতি গভীর আগ্রহের প্রমাণ দেয়।

গত প্রায় এক বছর ধরে শীর্ষস্থান দখল করে আছে ফ্রান্সেসকা জিয়ানোনের লেখা “লা পোর্তালেত্তেরে” (La portalettere) উপন্যাসটি। ২০২৩ সালে প্রকাশিত এই বইটির প্রায় ৯০টি কপি বর্তমানে পাঠকদের হাতে রয়েছে। ১৯৩০-এর দশকের স্যালেন্টোর পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো, এটি ইতিহাস এবং একজন নারীর ব্যক্তিগত জীবনের গভীর গল্পকে সফলভাবে একত্রিত করেছে।

তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ফরাসি লেখিকা ভ্যালেরি পেরাঁ। তার লেখা “কামবিয়ারে ল’আকুয়া আই ফিওরি” (Cambiare l’acqua ai fiori) বইটি একটি সমসাময়িক ক্লাসিক হিসেবে পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এর ৮০টিরও বেশি কপি ধার দেওয়া হয়েছে। ঠিক তার পরেই রয়েছে একই লেখকের নতুন উপন্যাস “তাতা” (Tatà), যারও ৮০টির বেশি কপি পাঠকরা পড়ছেন। চতুর্থ স্থানে আবারও ফিরে এসেছেন ফ্রান্সেসকা জিয়ানোনে তার “দোমানি, দোমানি” (Domani, domani) উপন্যাসের মাধ্যমে।

এছাড়াও, ইতালীয় লেখিকাদের মধ্যে মিলেনা পালমিনতেরির লেখা “কোমে ল’আরাঞ্চো আমারো” (Come l’arancio amaro) এবং সিলভিয়া আভালোনের “কুওরে নেরো” (Cuore nero) পাঠকদের পছন্দের তালিকায় উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।

বুলগাকভের ক্লাসিক अब কমিকসের পাতায়

প্রচলিত ধারার উপন্যাসের পাশাপাশি ইতালিতে কমিকস বা গ্রাফিক নভেলের মাধ্যমে ক্লাসিক সাহিত্যকে তুলে ধরার একটি প্রয়াস বিশেষভাবে ಗಮನ ಸೆಳೆದಿದೆ। এই ধারার একজন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী হলেন মার্কো ডি’আপন্তে। তিনি এর আগেও বিভিন্ন বিখ্যাত সাহিত্যকর্মকে কমিকসের রূপ দিয়েছেন। তবে এ বছর তিনি মিখাইল বুলগাকভের বিখ্যাত উপন্যাস “উওভা ফাতালি” (Uova fatali) বা “মারাত্মক ডিম”-কে গ্রাফিক নভেলে রূপান্তরিত করেছেন, যার চিত্রনাট্যও তিনি নিজেই লিখেছেন।

১৯২৫ সালে লেখা বুলগাকভের এই গল্পে স্তালিনের শাসনামলে একজন রুশ বিজ্ঞানীর কথা বলা হয়েছে, যিনি একটি রহস্যময় রশ্মি আবিষ্কার করেন যা কোষের কার্যকলাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু ভুলবশত সাপের ডিমের উপর এই রশ্মি প্রয়োগ করার ফলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডি’আপন্তে তার গ্রাফিক নভেলে মূল গল্পের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন এবং তৎকালীন সোভিয়েত শাসনের ব্যঙ্গাত্মক দিকগুলো নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। এর শক্তিশালী বর্ণনা এবং আকর্ষণীয় চিত্রায়ন, বিশেষ করে গল্পের শেষ ভাগে যখন দৈত্যাকার টিকটিকি রাজধানী আক্রমণ করে, সেই দৃশ্যগুলো পাঠকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

** চিত্রকরের বায়োগ্রাফি, তবে ভিন্ন আঙ্গিকে**

মার্কো ডি’আপন্তের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো “কোডেক্স রুবেনস” (Codex Rubens), যা তিনি ফরাসি লেখক মিশেল হোয়েলার্ড এবং নাতালি নোর সাথে যৌথভাবে তৈরি করেছেন। এটি বিখ্যাত চিত্রকর পিটার পল রুবেনসের একটি জীবনীভিত্তিক গ্রাফিক নভেল, তবে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কিছুটা কাল্পনিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই গ্রাফিক নভেলের গল্পে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু অসঙ্গতি রাখা হয়েছে, যেমন— সতেরো শতকের এক সম্ভ্রান্ত নারীকে ম্যানতুয়ার রাস্তায় সাইকেল চালাতে দেখা যায়। এমনকি একটি অংশে রুবেনসের সাথে চিত্রকর পাবলো পিকাসোর একটি কাল্পনিক সাক্ষাতের দৃশ্যও রয়েছে। ডি’আপন্তে তার চিত্রশিল্পীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রুবেনসের বারোক শৈলীকে কমিকসের পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। মূল কাহিনীর পাশাপাশি সমান্তরালভাবে বর্তমান জার্মানির একটি গল্পও বলা হয়েছে, যেখানে এক তরুণী একটি প্রাচীন পান্ডুলিপি খুঁজে পায়। দুটি ভিন্ন সময়ের গল্পকে একসাথে উপস্থাপন করে ডি’আপন্তে তার শৈল্পিক দক্ষতার এক দারুণ নিদর্শন রেখেছেন।

You may have missed