পোল্ট্রি শিল্পে প্রবৃদ্ধির ধারা: একদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর বিকল্পের সন্ধান

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। একদিকে যেমন ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বাড়ছে, তেমনি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ঝুঁকছেন কোয়েলের ডিমের মতো পুষ্টিকর বিকল্পের দিকে। এই প্রতিবেদনে আমরা পোল্ট্রি শিল্পের দুটি দিকই তুলে ধরব।

ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন গতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (USDA) কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা মেটাতে পোল্ট্রি উৎপাদনকারীরা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, যা পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট।

প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত সপ্তাহে ২৪৭.১০৫ মিলিয়ন ব্রয়লার মুরগির ডিম ইনকিউবেশনে রাখা হয়েছে, যা তার আগের সপ্তাহের চেয়ে ২.০৪৫ মিলিয়ন বেশি এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে, মাংস উৎপাদনের জন্য ১৯৫.২৯৪ মিলিয়ন ব্রয়লার মুরগির ছানা সরবরাহ করা হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১.৪৩৭ মিলিয়ন বেশি এবং বার্ষিক ২% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই পাখিগুলো অক্টোবরের শেষ নাগাদ বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হবে।

সামগ্রিকভাবে, ২০২৫ সালের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ২০২৪ সালের তুলনায় ১% এগিয়ে রয়েছে, যা এই শিল্পের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে কোয়েলের ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি

ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর বিকল্প হিসেবে কোয়েলের ডিমের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণের দিক থেকে কোয়েলের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। যারা কোলেস্টেরলের কারণে মুরগির ডিম এড়িয়ে চলেন, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম (কোয়েলের ডিমে ১.৪% לעומת মুরগির ডিমে ৪%)। তবে প্রোটিনের পরিমাণ মুরগির ডিমের চেয়ে প্রায় ৭% বেশি। এর ফলে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কোয়েলের ডিমের অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

কোয়েলের ডিমকে বলা হয় পুষ্টির আধার। এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং অ্যামাইনো অ্যাসিডের এমন সমন্বয় রয়েছে যা শরীরের সার্বিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তোলে।

  • ভিটামিনের প্রাচুর্য: মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েলের ডিমে ভিটামিন বি-১ ছয়গুণ, আয়রন ও ফসফরাস পাঁচগুণ এবং ভিটামিন বি-২ পনেরোগুণ বেশি থাকে।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কোয়েলের ডিমে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। চিকিৎসকদের মতে, এটি কিডনির সমস্যা, রক্তস্বল্পতা এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে উপকারী।

  • শিশু ও বয়স্কদের জন্য আদর্শ: কোয়েলের ডিম শিশুদের মানসিক, শারীরিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া দুর্বল শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা নিয়মিত তিন থেকে চারটি কোয়েলের ডিম খেলে শারীরিক শক্তি ফিরে পেতে পারেন।

সুতরাং, একদিকে যেমন পোল্ট্রি শিল্পে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের মধ্যে কোয়েলের ডিমের মতো প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর খাবারের চাহিদাও বাড়ছে, যা বাজারের বৈচিত্র্যময়তাকে তুলে ধরে।

You may have missed